শফিকুল ইসলাম খোকন

শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮

৯ ফাল্গুন কেন নয়?


শফিকুল ইসলাম খোকন
গ্রাম্য ভাষায় একটি কথা আছে, “আগে ঘর ঠিক করো? পরে বাহির” অর্থাৎ আগে নিজের ঘর সামলাতে না পারলে, বাহির (সমাজ)সামলানো সম্ভব নয়; এ কথাটির সাথে আমরা সবাই একমত পোষন করতে পারি। যে জাতি  মায়ের ভাষার অধিকার রায় রক্ত দিয়েছে, তারা কোনো কিছুতেই হার মানবে না, মানার কথাও নয়। আর বাংলা ভাষা জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা? এটিতো আনন্দের কথা; কিন্তু আমাদের ঘরতো এখনো ঠিক হয়নি। ৫২ এর পরে এতো বছর পেরুলেও এখনো আমরা মায়ের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা আনতে পারিনি। আমরা বাঙ্গালী, আমরা হাড়তে শিখিনি; কারণ আমরা মাছে-ভাতে বাঙ্গালী, আমরা পিছনের সব কাজেই সফল হয়েছি। ৫২র ভাষা, ৬৯ অভ্যূত্থান, ৭১ এর স¦াধীনতা। তারই ফলশ্রতিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বা শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে গোটা বিশ্বে। তারপরেও আমাদের দেশে মায়ের ভাষাকে মুল্যায়ন করছি না।

১৯৪৭ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্র ও অধ্যাপকের উদ্যোগে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। এ তমদ্দুন মজলিশ ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলাÑ না উর্দু?’ এ নামে একটি পুস্তিকা ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রকাশ করে। এ পুস্তিকাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং তমদ্দুন মজলিশের প্রধান কর্মকর্তা আবুল কাসেম কর্তৃক লিখিত ভাষাবিষয়ক একটি প্রস্তাব সংযোজিত করা হয়। প্রস্তাবটিতে বাংলা ভাষা চালু করার দাবি জানানো হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুসংখ্যক নেতৃস্থানীয় ছাত্র ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ প্রতিষ্ঠা করেন। তারা নতুন ছাত্র সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা ল্য, নীতি ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে একটি সার্কুলার প্রচার করেন বাংলায়। বাংলাভাষার জন্য আন্দোলনের সূত্রপাত হয় এবং তা রক্তয়ী আন্দোলনে রূপলাভ করে। আন্দোলন সফল হয়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করে বাংলা ভাষা। প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমী, বাংলা উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শুরু হয় জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রাম। অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বাংলায় প্রণীত হয় সংবিধান। সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদের বিধানাবলী পূর্ণরূপে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে ‘বাংলাভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭’ (১৯৮৭ সালের ২ নং আইন) প্রণীত হয়। 

বায়ান্নর ফেব্রুয়ারি এই দিনে বাঙালির আত্মপরিচয় ও স্বকীয়তাবোধের জাগ্রত চেতনা থেকে উৎসারিত একটি দিন। এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার সম্মান রার তাগিদে বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছিলেন বাংলার দামাল তরুণরা। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিতে দিতে তাঁরা ঘাতকের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ নাম-না-জানা অনেক শহীদ বুকের রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন ঢাকার রাজপথ। তাঁরা বিদেশি শাসকদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলা ও বাঙালি এক অবিচ্ছিন্ন সত্তা। এই শক্তিকে অস্বীকার করার শক্তি কারো নেই। অমর সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাঙালিরা এ দিনে ছুটে যায় শহীদ মিনারে। পুষ্পে পুষ্পে ভরে যায় শহীদ মিনার। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাখো মানুষের ঢল নামে। শহীদ মিনার রূপ নেয় স্মৃতির মিনারে। আজ সেই মহান শহীদ দিবস, শুধু আমরা নই, সারা বিশ্বই পালন করবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। স্মরণ করবে, শ্রদ্ধা জানাবে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি। আমরা শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করি ভাষা আন্দোলনের জানা-অজানা সব শহীদকে।

জাতিসংঘে প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় ভাষণ দেওয়ার পর অনেকেই সেখানে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। এখন চেষ্টা চলছে বাংলাকে জাতিসংঘের সরকারি ভাষায় অন্তর্ভূক্ত করানোর। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। এক সপ্তাহ পর ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৩০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্বসভায় দেওয়া বঙ্গবন্ধুর সে ভাষণ ছিল বাংলায়। এই প্রথম বিশ্ব সংস্থার কোনো আনুষ্ঠানিক সভায় বাংলা ভাষা ব্যবহূতর পর বাঙালিদের মনে প্রবল উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে বিশ্বের ২৫ কোটিরও বেশি মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। তাহলে বাংলা জাতিসংঘের সরকারি ভাষা কেন হবে না? ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করলে এ নিয়ে বাংলা ভাষাভাষীদের মনে নতুন উত্সাহের সঞ্চার হয়। দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনা যতবার নিউইয়র্কে গেছেন, বাংলাকে জাতিসংঘের ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করেছেন। এ নিয়ে তিনি নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন জাতিসংঘ মহাসচিব ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করেছেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের আইন পরিষদে বাংলাকে জাতিসংঘের সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দাবি করে এক প্রস্তাব গৃহীত হয়। যত আবেগবাহী বা চেষ্টা করা হোক না কেন, এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন করা কষ্টসাধ্য। বাংলা অথবা অন্য যেকোনো ভাষা জাতিসংঘের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে তা নিয়ে সাধারণ পরিষদের অধিকাংশ সদস্যের সমর্থনে প্রস্তাব গৃহীত হতে হবে। 

দেখতে পাচ্ছি আমরা বাংলা ভাষাকে পিছনে ফেলে রেখে ইংরেজি ভাষা চর্চা করছি। একবিংশ শতাব্দির জিডিটাল যুগে যেখানে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার সরকারের চেষ্টা চলছে সেখানে আমরা নিজেরাই বাংলার প্রতি শ্রদ্ধা রাখছি না। রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা রা করি। সেই ইতিহাস আমাদের জন্য গৌরবের। শুধু বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠাই নয়, একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের ভাবনা থেকেও ভাষা আন্দোলন বাঙালিদের জন্য গৌরবের হয়ে থাকবে। তবে কষ্ট হয় তখনই যখন এই ভাষার ব্যবহার সঠিকভাবে হয় না। ভাবতে অবাগ লাগে। ১৯১৮ সালে এক বক্তৃতায় জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন-‘আমরা বঙ্গদেশবাসী। আমাদের কথাবার্তার, ভয়-ভালোবাসার, চিন্তা-কল্পনার ভাষা বাংলা। তাই আমাদের মাতৃভাষা বাংলা।’ কিন্তু সেই মাতৃভাষাকে আমরা এখনো ভালোবাসতে  শিখিনি। আজকের আমরা কী দেখছি- রাস্তা-ঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় সব েেত্র বাংলার বিপরীতে ইংরেজি ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ ‘বাংলাভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭’ এর ‘৩। (১) এই আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারী অফিস, আদালত, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সকল েেত্র নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হইবে।’ তবে কিছুটা স¦স্তি ফিরে এসেছে সাইনবোর্ড বাংলা না লেখায় জরিমানা করতে দেখে। 

পৃথিবীতে মাতৃভাষার সম্মান রার জন্য আত্মাহুতি দেওয়ার ঘটনা বিরল। আমরা সেই বিরল দৃষ্টান্তের অধিকারী। এ জন্য জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত। সেই গর্ব, সেই অহংকার নিয়ে বাংলা ও বাঙালির ভাষিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও কৃষ্টি এগিয়ে নেওয়ার সার্বণিক চেষ্টা আমাদের করে যেতেই হবে। আর তার মাধ্যমেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে সেই প্রশ্নের আজও কেউ খন্ডন করেনি বা করার চেষ্টাও করেনি। প্রশ্নটি হচ্ছে, ২১ ফেরুয়ারি কেন? ৮ ফাল্গুন কেন নয়? আমরা কেন ২১ ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছি সেই ১৯৫২ সাল থেকে। তখন বঙ্গাব্দ ছিল ১৩৫৮-এর ৮ ফাল্গুন। আমার জিজ্ঞাসা আমরা কেন ১৩৫৮-এর বঙ্গাব্দের ৮ ফাল্গুন পালন করতে পারছি না। বাধাটা কোথায়? বলা হয় মাতৃভাষা দিবস। ফেব্রুয়ারি মাসটা কি মাতৃভাষা শব্দের সাথে যুক্ত নয়। মাতৃভাষা দিবস যদি বলা হয় তবে ফাল্গুন মাস স্বাভাবিকভাবে সামনে এসে দাঁড়ায়। এখানে কোন অন্তরায় সৃষ্টি করে না। যেটা ফেব্রুয়ারি অবশ্যই অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। হিসেব কষলে পাওয়া যায়, পাকিস্তান আমলে আমরা ১৯টি বছর একুশকে পেয়েছি এবং একুশ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত ছিল। পাকিস্তান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। স¦াধীনতার পর থেকে  এখন পর্যন্ত সেইদিনই পালন করছে বাংলাদেশ। এখন তো পাকিস্তানি ভিনভাষীরা শাসন করছে না, তবে কেন ৮ই ফাল্গুন স্বীকৃতি পেল না? সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যথার্থই বলেছেন- আদালতে বাংলা ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা ইংরেজি আইন।

এরপরও কিন্তু বাংলাদেশের দপ্তর-আদালতে বাংলা ভাষা চালুর েেত্র কোন প্রকার বাঁধা থাকার কথা নয়। বাস্তব সত্য যে, বাংলাদেশের দপ্তর (অফিস)-আদালতে বাংলা ভাষা পরিপূর্ণভাবে আজও চালু হয়নি। এমনকি উচ্চ আদালতে রায় এবং আদেশ লিপিবদ্ধ হয় ইংরেজীতে। চিকিৎসকরা রোগিদের ব্যবস্থাপত্র দেন ইংরেজিতে, তাও বোঝা বড় দায়। যদিও উচ্চাদালতের একটি আদেশে বড় অরে লিখতে বলেছেন ব্যবস্থাপত্র। তবে আশাবাদি আগামীতে উচ্চাদালত ইংরেজিতে বড় অর নয়, বাংলাতেই ব্যবস্থাপত্র লেখার আদেশ দিবেন। সর্ব েেত্র এখন ইংরেজীকে প্রাধান্য দেয়া হয় বেশি আর বাংলাকে রাখা হয় ইংরেজির পাশাপাশি। অথচ বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাকে রাখার কথা। দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাষা প্রতিযোগিতায় সেখানেও বাংলাকে প্রাধান্য না দিয়ে ইংরেজিকে প্রাধান্য বা মুল্যায়ন করা হয়ে থাকে। ১৯৮৭ সালের ২নং আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এ পর্যন্ত কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ীকে শাস্তি দেয়া হয়নি। যদিও উক্ত আইন অহরহ লঙ্ঘিত হচ্ছে। আসলে কাগজে কলমে ভাষা আন্দোলনের স¦াধীন হলেও সত্যিকারের ভাষা আজও বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমাদের পিছনের দিকে ফিরে দেখা উচিত- আইন করে কিন্তু বাংলা ভাষা কার্যকর হয়নি; আন্দোলনের মাধ্যমে হয়েছে। ফের্রুয়ারি মাস আসলেই ভাষার কথা মনে পরে যায়, মনে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার। কিন্তু বাস্তবে সেই শহীদদের মুল্যয়নতো করছি না বরং তাদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্যকেও আমরা ধরে রাখতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করতে সরকার চেষ্টা করছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি- আগে নিজের ঘর ঠিক না করতে পারলে অন্যের ঘর ঠিক করা সম্ভব নয়। হ্যাঁ আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করবেন সেটি অবশ্যই আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। কিন্তুু আমরা এখনো মায়ের ভাষাকে প্রাধান্য দিতে পারেনি, করতে পারিনি ভাষা শহীদের মুল্যায়ন। আমাদের দেশের প্রত্যেক সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ সকল প্রতিষ্ঠানে আগে মায়ের ভাষাকে বাধ্যতামুলক করা উচিত।

এতো কিছুর পরেও বারবার প্রশ্ন রয়ে যায়, তাহলে বাংলা ভাষা সর্বেেত্র বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার উপরে? কেই বা এর দায়িত্ব নিবে? উচ্চাদালতের রায়কেও আমরা বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছি। আমি মনে করছি- এর দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়, এর দায়িত্ব সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিসহ আপমর জনসাধারণের। এ েেত্র সরকারের পাশাপাশি বড় ভুমিকা রাখতে পারে বাংলা একাডেমি। তাহলে সরকার বা বাংলা একাডেমী কি করছে? এই প্রতিষ্ঠানটিই কিন্তু এই প্রধান প্রধান একাধিক কাজগুলোর দায়িত্ব ঠিক ঠিকভাবে সমাপ্ত করতে পারত। যেমন প্রধান বিষয়ের মধ্যে বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু না করে ১ ফাল্গুন থেকে শুরু করতে পারত। এতে এমন কিছুর অন্তরায় তো দেখছি না। একটি ঘোষণা দিলেই সবকিছুর সমাধান হতো-বইমেলার উৎসুক দর্শক-পাঠকরা সেই অনুসারেই আসা-যাওয়া করত। অসুবিধা তো হবার নয়। হয়তো খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করাতে বলত, ভাই যেটা চলে আসছে। হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি এটি সত্য। আবার এটিও সত্য যে, বাংলা ভাষা এখন শুধু জাতিসঙ্গেই নয় আন্তর্জাতিকভাবে বাংলা ভাষা স¦ীকৃতি পেয়েছে এবং এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেই গোটা বিশ্বে পালন করছে। তাহলে এমন খোড়া যুক্তির তেমন কাজে আসবে বলে মনে হচ্ছে না। আমরা বাংলাদেশী, আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি, বাংলা আমার মায়ের ভাষা, তাহলে কেন আমরা ২১ ফেরুয়ারি ব্যবহার করছি? ১ ফাল্গুন যদি ঢাকঢোল বাজিয়ে বসন্ত উৎসব পালন করতে পারি, তাহলে কেন ৯ ফাল্গুন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করতে পারবো না। এখানে বাঁধাটা  কোথায়। আসলে বাধাটা হচ্ছে মনে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। এখানে শেখ হাসিনার সরকারই এর বড় ভুমিকা রাখতে পারবে। 

পরিশেষে বলতে চাই- এখনো রাষ্ট্র ভাষা বাংলা সঠিকভাবে রুপান্তরিত হয়নি। ভাষা আন্দোলন বলতে ৫২ এর ভাষা আন্দোলনকেই বুঝায়, কিন্তু প্রকৃত পে মাতৃভাষা নিয়ে ুদ্র ুদ্র আন্দোলন বা সংগ্রাম দেশে বিভাগের অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। তেমনি শুধু ৫২এর আন্দোলনই শেষ নয় এখনো বাংলা ভাষার আন্দোলন শেষ হয়নি। আসুন আমরা সবাই বাংলা ভাষাকে মায়ের মত করে বুকে টেনে নেই। তা নাহলে ভাষা শহীদদের আত্মা হয়তো শান্তি পাবে না। আমাদের দাবি- জাতিসংঘের ৬টি দাপ্তরিক ভাষা ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, মান্দারিন, রুশ ও আরবির সাথে এবার বাংলাকে ৭ম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হোক।

লেখক [সাংবাদিক কলামিষ্ট ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক]
msi.khokonp@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নদী মরলে দেশও মরবে

: শফিকুল ইসলাম খোকন : নদীমাতৃক দেশে নদীই আমাদের ভরসা। নদী আমাদের হৃৎপিণ্ড, নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না, প্রকৃতি বাঁচবে না, পরিবেশের সুরক্ষা ...