শফিকুল ইসলাম খোকন

শনিবার, ১৯ মে, ২০১৮

বিশ্ব স্যাটেলাইট ক্লাবে বাংলাদেশের প্রবেশ

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ২টা ১৪ মিনিট। গোটা দেশের কোটি কোটি চোখ যখন টিভি পর্দায়, ঠিক তখনই স্বপ্ন হলো সত্যি! যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর কেপ কেনেডি সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে তীব্র বেগে মহাকাশে ছুটল বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ ব্লক-৫ রকেটে চেপে আকাশে উড়াল দেয় সাড়ে ৩ হাজার কেজি ওজনের এই স্যাটেলাইট। রকেটটি মহাকাশে বাংলাদেশের ভাড়া নেওয়া অরবিটাল সøট ১১৯.৯ ডিগ্রিতে নিয়ে যাবে স্যাটেলাইটটিকে। উৎক্ষেপণের পর দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরও ধন্যবাদ জানান।
এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে অবিস্মরণীয় এক অর্জন হলো বাংলাদেশের। বহু আগেই বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেলের স্বীকৃতি পেয়েছে। এবার মহাকাশেও লাল-সবুজের গৌরবগাথা দেখল বিশ্ব। ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাল বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। সে ধাপটি হলো বিশ্ব স্যাটেলাইট ক্লাবে প্রবেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে ১০ দিন পর মহাকাশের নির্ধারিত ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশের কক্ষপথে পেঁৗঁছবে বাংলাদেশের অহংকারের প্রতীক বঙ্গবন্ধু-১। তিন মাস পর পাওয়া যাবে এর পূর্ণাঙ্গ সেবা। উৎক্ষেপণের কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার (১২ মে) দুপুরে গাজীপুরে ও বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ গ্রাউন্ড স্টেশনে প্রাথমিক পরীক্ষামূলক সংকেত পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় বিকাল ৬টা ২৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টা ২৫ মিনিট) বঙ্গবন্ধু-১ গাজীপুরে ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় গ্রাউন্ড স্টেশনে সংকেত পাঠায়। কৃত্রিম স্যাটেলাইটটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ২২ হাজার মাইল উপরে অবস্থান করে প্রায় ৪০ ধরনের সেবা দিয়ে যাবে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৩টা ৪৭ মিনিটে উৎক্ষেপণের সময়সূচি নির্ধারিত ছিল। সব প্রস্তুতি সেরে উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। কিন্তু মিনিটখানেক আগে সমস্যা দেখা দেওয়ায় স্যাটেলাইটটি আর ওড়েনি লঞ্চপ্যাড থেকে।
জানা যায়, স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু-১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও রয়েছে। উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ সেবা পরিচালনায় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে একনেক সভায় ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ’ প্রকল্প অনুমোদন পায়। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ। এছাড়া ‘বিডার্স ফাইন্যান্সিং’ এর মাধ্যমে এ প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। ১ দশমিক ৫১ শতাংশ হার সুদসহ ১২ বছরে ২০ কিস্তিতে ওই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। স্যাটেলাইট সিস্টেমের নকশা তৈরির জন্য ২০১২ সালের মার্চে প্রকল্পের মূল পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ প্রায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’। এরপর স্যাটেলাইট সিস্টেম কিনতে ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে ১ হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার চুক্তি করে বিটিআরসি।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে অনেককেই বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা গেছে গণমাধ্যমে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কিংবা বিরোধিতার কারণে সমালোচনা যা-ই করুক না কেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বিশ্ব স্যাটেলাইট ক্লাবে যেমন স্থান করে নিয়েছে, তেমনি দেশের প্রযুক্তি খাত এবং অর্থনৈতিক বড় ভূমিকা রাখবে। স্যাটেলাইট সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ওটার মালিকানা চলে গেছে জানেন তো? এই স্যাটেলাইটের মালিকানা চলে গেছে দুজন লোকের হাতে এবং সেখান থেকে আপনাদের কিনে নিতে হবে।’ (সূত্র : দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১২ মে ২০১৮)। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনি মহাকাশ জয় করেছেন; কিন্তু মানুষের মন জয় করতে পারেননি।’ (সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, ১২ মে ২০১৮)। সব কাজেই সমালোচনা থাকবেÑ এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেখানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রযুক্তি এবং আর্থিক খাতে বড় ভূমিকা রাখবে, সেখানেও সমালোচনা রয়েছে। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল প্রতি বছর অন্যান্য দেশের স্যাটেলাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দেড় কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করে। বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হলে এ অর্থ বাংলাদেশেই থেকে যাবে। এছাড়া স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া যাবে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ। ফলে ব্যান্ডউইথের বিকল্প উৎসও পাওয়া যাবে। এই ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও দেশের দুর্গম দ্বীপ, নদী ও হাওর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা চালুও সম্ভব হবে। স্যাটেলাইট ভাড়া সম্পর্কে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক যথার্থই বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই নেব। যেমন ধরুন, ভাড়া বাড়িতে থাকলাম; কিন্তু বাড়িটা কখনও আমার হলো না। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ভাড়া দিলে সেটি থেকে বাংলাদেশের আয় হবে।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো অ্যাপস্টার সেভেন নামের একটি বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ বাংলাদেশের প্রতিটি টেলিভিশন স্টেশন মাসে ২৪ হাজার ডলার খরচ করে। সেই হিসাবে বাংলাদেশের সব টেলিভিশন চ্যানেলের বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে মোট খরচের পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ ডলার।’
মোজাম্মেল হকের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে হয়, অন্তত আর যা-ই হোক, স্যাটেলাইট ভাড়া হিসেবে প্রতি মাসে গুনতে হতো প্রায় ১৫ লাখ ডলার। অন্তত দেশের টাকা তো দেশেই থাকল। শুধু তা-ই নয়, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্যাটেলাইট নিয়ে রয়েছে অনেক ভাবনা, রয়েছে অনেক সম্ভাবনা। বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) স্যাটেলাইট মহাকাশে কাজ শুরু করার তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুঁজিবাজারে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনার কথাও ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে গুনতে হয় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। নিজস্ব উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশ সেই নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠে অর্থ সাশ্রয় করতে পারবে বলে সরকার আশা করছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে রয়েছে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। এর ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে নেপাল, মিয়ানমার ও ভুটানের কাছে স্যাটেলাইট সেবা দিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দিয়েই শেষ নয়, সংশ্লিষ্টদেরসহ আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। এটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের অনেক পরিকল্পনাও নিতে হবে। যে পরিকল্পনা হবে জনবান্ধব, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিবান্ধব। 
পরিশেষে বলতে চাই, আলোচনা-সমালোচনা হওয়া উচিত গঠনমূলক। প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের জন্য, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশটি উচ্চপর্যায়ে স্থান করে নেওয়ার জন্য অন্তত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে সমালোচনা কাম্য নয়। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই দেশটি বিশ্বের কাছে যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, সেই মানসিকতা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিই। 
শফিকুল ইসলাম খোকন
সাংবাদিক ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক
msi.khokonp@gmail.com

সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮

পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় মা

::শফিকুল ইসলাম খোকন::
যদি কোনো সন্তানকে প্রশ্ন করা হয়Ñ কাকে বেশি ভালোবাস? কে তোমার সবচেয়ে প্রিয়? কে তোমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু? প্রশ্নের উত্তরে কেউ মায়ের কথা অস্বীকার করতে পারবে না। ‘মা’ হলো বন্ধু, মা হলো সবচেয়ে আপন, মা হলো আত্মার প্রাণ। পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুরতম ডাক মা। মা শব্দটি যেমন আমাদের সবচেয়ে প্রিয়, তেমনি মা-ও আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ, সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, আবার কখনও মা বন্ধুও বটে। কেননা মা আমাদের জন্য যে কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করেন, তা কি আর কেউ করতে পারবে? পারবে না।
নদী ভালোবাসে পানিকে, সাগর ভালোবাসে আছড়ে পড়া ঢেউকে, আকাশ ভালোবাসে মাটিকে, পাহাড় ভালোবাসে ঝরনাকে, চাঁদ ভালোবাসে জোছনাকে, সূর্য ভালোবাসে রোদকে, মাছ ভালোবাসে পানিকে, পাখি ভালোবাসে মুক্ত আকাশকে, তার চেয়ে কোটি কোটি গুণ বেশি ভালোবাসেন মা তার সন্তানকে। মায়ের কাছে আমাদের যে ঋণ, তা কখনও শোধ করা সম্ভব নয়। তবে আমরা তো চাইলে তাকে জীবনভর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দিতে পারি, নাকি? সেজন্য কিন্তু প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে বিশেষ একটি দিন আলাদা করে রাখা হয়েছে। এই দিনটি শুধুই মায়েদের জন্য।
‘মা’ বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি কোমল, দরদি, স্নেহশীল, মমতাময়ী নারী। মা শব্দটি মুখে উচ্চারণ করার আগেই মনের মণিকোঠায় নাড়া দেয় মা। মা বলতে আমরা বুঝি সেই মমতাপূর্ণ, ধৈর্যশীল, আত্মোৎসর্গকারী, সরল, ত্যাগী, সে আমার মা, সে আমার বাবার স্ত্রী। আর এ সবকিছুর ভিড়ে হারিয়ে যায় মায়ের ব্যক্তিপরিচয়, মায়ের ভালোলাগা-মন্দলাগা, মায়ের ইচ্ছা, মায়ের স্বাধীনতা। মা যখন মা হন, মা তখন আর নিজের থাকেন না, মা হয়ে যান সন্তানের, পরিবারের। সন্তানের মা হওয়ার পর মা শব্দটি তার কানে বেজে উঠলেই মা সবকিছুর মধ্যে হারিয়ে যান। মায়ের নিজের ইচ্ছা, আকাক্সক্ষা, সুখ-দুঃখ বলে আর কিছুই থাকে না। সন্তানের ইচ্ছাই তখন মায়ের ইচ্ছা। সন্তানের পছন্দই তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মায়ের কাছে। সন্তানের বিজয়ে মা গর্ববোধ করেন, সন্তানের ভালো কাজ মায়ের অহংকার। সন্তানের খুশিতে খুশি হন, সন্তানের দুঃখে দুঃখী হন। একজন মা নিজের ভেতর জন্ম দেন আরেকটি জীবন, যা পৃথিবীতে শুধু একজন নারীর পক্ষেই সম্ভব।
মা। ছোট্ট একটি শব্দ। একটি পৃথিবী। শুধু পৃথিবী নয়, ত্রিভুবন। স্বর্গাদপী গরীয়সী। মা স্বার্থহীন। আসলে কোনো উপমাই মায়ের জন্য যথেষ্ট নয়। কোনো কিছুর তুলনা হতে পারে না মা। মা তো মা-ই। সেই মায়ের প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানানোর একটি বিশেষ দিন আজ। বিশ্ব মা দিবস। মে মাসের দ্বিতীয় রোববার। এই দিনে বিশ্বের মানুষ বিনম্র চিত্তে মাকে স্মরণ করে। শুধু একবার মা বলে ডাকলেই এক স্বর্গীয় পুণ্যে হৃদয়-মন অমীয় সুধায় প্লাবিত হয়। মা, ত্রিভুবনের সবচেয়ে মধুরতম শব্দ। তাই মা-ই বসুন্ধরা, মা-ই ছায়া, মা-ই মায়া। মা এক মমতার আধার। মা মানেই নিশ্চয়তা, মা মানেই নিরাপত্তা, মা মানেই অস্তিত্ব, মা মানেই আশ্রয়, মা মানেই অন্ধকারে একবুক ভালোবাসা, স্নেহের অফুরান ভা-ার। মা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয়, আপনজন। প্রতিটি মানুষের কাছে তার মা তুলনাহীন ও অনন্যা। মাকে ভালোবাসা আর তার প্রতি হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধার বিষয় পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোয় অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামে মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশতের কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য ধর্মেও মাতৃভক্তি আর তার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞানকে সবার উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে। মাকে নিয়ে কবি-গীতিকারসহ বিশিষ্টজনরা অজস্র ছত্র রচনা করেছেন। 
পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যে মাকে ভালোবাসে না। ব্যতিক্রমের বিষয়টা বাদ দিয়ে এটাই আমাদের সাধারণ জীবনের অসাধারণ এক সমীকরণ। এ বৃত্তে বন্দি প্রায় প্রতিটি প্রাণী। শুধু মানুষ বললেই ভুল হবে, প্রায় প্রতিটি জীবই মাতৃত্বের এই আলোকসামান্য গোলকধাঁধার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে। একবার চিন্তা করে দেখুন তো, মাতৃত্বের এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যদি ব্যাহত হতো, তাহলে অবস্থাটা কী হতো? আর যা-ই হোক, যে এক জীবনে মাকে পেল, সে মাকে হারাতে চাইবে না কোনোদিন। মা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন। এই পৃথিবীতে মা ছাড়া কেউ তার সন্তানকে স্বার্থহীনভাবে ভালোবাসে না। মায়ের ভালোবাসার মধ্যে আছে প্রকৃত সুখ। দূর গাঁয়ে ফেলে আসা মায়ের মুখ, মায়ের স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠা, মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকার বেদনা কিংবা সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে দূর অজানায় পাড়ি জমানোর পর মায়ের স্মৃতিÑ এসবই আমাদের প্রতিনিয়ত পোড়ায়। হু হু করে ওঠে বুকের ভেতরটা। আর যখনই মায়ের কথা মনে পড়ে, মনের অজান্তেই চোখ ভিজে যায়। ইচ্ছা করে ছুটে যাই মায়ের কাছে। একচিলতে আদর আর শাড়ির আঁচলে মুখটা বেঁধে ডুব দিই ভালোবাসার সাগরে। জন্মের সূচনাপর্ব থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মায়ের অবদান অতুলনীয়। কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায়Ñ কিছু সন্তান যেমন তার মাকে সবসময় যথেষ্ট সম্মান দেয় না, ঠিক তেমনি মা-ও তার মাতৃত্বের অকৃত্রিম ভালোবাসা ভুলে নিজের মতো করে অবিবেচনাপ্রসূত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
যে মা আমাকে গর্ভে ধারণ করে পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখিয়েছেন, আজ সেই মাকে আমরা কখনও কখনও অবহিলিত অবস্থায় দেখতে পাই। কথায় বলেÑ ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না’। মা ঠিক তেমনই এক ব্যক্তি, যাকে একবার হারালে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। অন্য সবকিছু হারালে তা পাওয়া যায় বা পাওয়া সম্ভব’ কিন্তু মা হারালে, মা পাওয়া গেলেও আপন মায়ের মতো আর পাওয়া যাবে না। প্রত্যেক মা-ই তার নিজের অজান্তেই চান, তিনি যেমন তার সন্তানকে অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে বেঁধে রাখেন। তার সন্তানও তেমনি তার প্রতি ভালোবাসার ডানা প্রসারিত করুক। মুখের নয়, প্রত্যেক মায়ের মনের এই আশা পূরণের জন্য আমরা সবাই সচেষ্ট হই। মা দিবসে প্রতিটি মায়ের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা ও নিরন্তর ভালোবাসা। শুধু দিবসেই নয়, মাকে সবসময় মনের মণিকোঠায় রেখে মায়ের সম্মান দিয়ে আগলে রাখবÑ এটাই প্রত্যাশা সবার প্রতি। 
শফিকুল ইসলাম খোকন সাংবাদিক ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক

নদী মরলে দেশও মরবে

: শফিকুল ইসলাম খোকন : নদীমাতৃক দেশে নদীই আমাদের ভরসা। নদী আমাদের হৃৎপিণ্ড, নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না, প্রকৃতি বাঁচবে না, পরিবেশের সুরক্ষা ...