শফিকুল ইসলাম খোকন

সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮

পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় মা

::শফিকুল ইসলাম খোকন::
যদি কোনো সন্তানকে প্রশ্ন করা হয়Ñ কাকে বেশি ভালোবাস? কে তোমার সবচেয়ে প্রিয়? কে তোমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু? প্রশ্নের উত্তরে কেউ মায়ের কথা অস্বীকার করতে পারবে না। ‘মা’ হলো বন্ধু, মা হলো সবচেয়ে আপন, মা হলো আত্মার প্রাণ। পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুরতম ডাক মা। মা শব্দটি যেমন আমাদের সবচেয়ে প্রিয়, তেমনি মা-ও আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ, সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, আবার কখনও মা বন্ধুও বটে। কেননা মা আমাদের জন্য যে কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করেন, তা কি আর কেউ করতে পারবে? পারবে না।
নদী ভালোবাসে পানিকে, সাগর ভালোবাসে আছড়ে পড়া ঢেউকে, আকাশ ভালোবাসে মাটিকে, পাহাড় ভালোবাসে ঝরনাকে, চাঁদ ভালোবাসে জোছনাকে, সূর্য ভালোবাসে রোদকে, মাছ ভালোবাসে পানিকে, পাখি ভালোবাসে মুক্ত আকাশকে, তার চেয়ে কোটি কোটি গুণ বেশি ভালোবাসেন মা তার সন্তানকে। মায়ের কাছে আমাদের যে ঋণ, তা কখনও শোধ করা সম্ভব নয়। তবে আমরা তো চাইলে তাকে জীবনভর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দিতে পারি, নাকি? সেজন্য কিন্তু প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে বিশেষ একটি দিন আলাদা করে রাখা হয়েছে। এই দিনটি শুধুই মায়েদের জন্য।
‘মা’ বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি কোমল, দরদি, স্নেহশীল, মমতাময়ী নারী। মা শব্দটি মুখে উচ্চারণ করার আগেই মনের মণিকোঠায় নাড়া দেয় মা। মা বলতে আমরা বুঝি সেই মমতাপূর্ণ, ধৈর্যশীল, আত্মোৎসর্গকারী, সরল, ত্যাগী, সে আমার মা, সে আমার বাবার স্ত্রী। আর এ সবকিছুর ভিড়ে হারিয়ে যায় মায়ের ব্যক্তিপরিচয়, মায়ের ভালোলাগা-মন্দলাগা, মায়ের ইচ্ছা, মায়ের স্বাধীনতা। মা যখন মা হন, মা তখন আর নিজের থাকেন না, মা হয়ে যান সন্তানের, পরিবারের। সন্তানের মা হওয়ার পর মা শব্দটি তার কানে বেজে উঠলেই মা সবকিছুর মধ্যে হারিয়ে যান। মায়ের নিজের ইচ্ছা, আকাক্সক্ষা, সুখ-দুঃখ বলে আর কিছুই থাকে না। সন্তানের ইচ্ছাই তখন মায়ের ইচ্ছা। সন্তানের পছন্দই তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মায়ের কাছে। সন্তানের বিজয়ে মা গর্ববোধ করেন, সন্তানের ভালো কাজ মায়ের অহংকার। সন্তানের খুশিতে খুশি হন, সন্তানের দুঃখে দুঃখী হন। একজন মা নিজের ভেতর জন্ম দেন আরেকটি জীবন, যা পৃথিবীতে শুধু একজন নারীর পক্ষেই সম্ভব।
মা। ছোট্ট একটি শব্দ। একটি পৃথিবী। শুধু পৃথিবী নয়, ত্রিভুবন। স্বর্গাদপী গরীয়সী। মা স্বার্থহীন। আসলে কোনো উপমাই মায়ের জন্য যথেষ্ট নয়। কোনো কিছুর তুলনা হতে পারে না মা। মা তো মা-ই। সেই মায়ের প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানানোর একটি বিশেষ দিন আজ। বিশ্ব মা দিবস। মে মাসের দ্বিতীয় রোববার। এই দিনে বিশ্বের মানুষ বিনম্র চিত্তে মাকে স্মরণ করে। শুধু একবার মা বলে ডাকলেই এক স্বর্গীয় পুণ্যে হৃদয়-মন অমীয় সুধায় প্লাবিত হয়। মা, ত্রিভুবনের সবচেয়ে মধুরতম শব্দ। তাই মা-ই বসুন্ধরা, মা-ই ছায়া, মা-ই মায়া। মা এক মমতার আধার। মা মানেই নিশ্চয়তা, মা মানেই নিরাপত্তা, মা মানেই অস্তিত্ব, মা মানেই আশ্রয়, মা মানেই অন্ধকারে একবুক ভালোবাসা, স্নেহের অফুরান ভা-ার। মা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয়, আপনজন। প্রতিটি মানুষের কাছে তার মা তুলনাহীন ও অনন্যা। মাকে ভালোবাসা আর তার প্রতি হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধার বিষয় পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোয় অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামে মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশতের কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য ধর্মেও মাতৃভক্তি আর তার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞানকে সবার উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে। মাকে নিয়ে কবি-গীতিকারসহ বিশিষ্টজনরা অজস্র ছত্র রচনা করেছেন। 
পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যে মাকে ভালোবাসে না। ব্যতিক্রমের বিষয়টা বাদ দিয়ে এটাই আমাদের সাধারণ জীবনের অসাধারণ এক সমীকরণ। এ বৃত্তে বন্দি প্রায় প্রতিটি প্রাণী। শুধু মানুষ বললেই ভুল হবে, প্রায় প্রতিটি জীবই মাতৃত্বের এই আলোকসামান্য গোলকধাঁধার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে। একবার চিন্তা করে দেখুন তো, মাতৃত্বের এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যদি ব্যাহত হতো, তাহলে অবস্থাটা কী হতো? আর যা-ই হোক, যে এক জীবনে মাকে পেল, সে মাকে হারাতে চাইবে না কোনোদিন। মা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন। এই পৃথিবীতে মা ছাড়া কেউ তার সন্তানকে স্বার্থহীনভাবে ভালোবাসে না। মায়ের ভালোবাসার মধ্যে আছে প্রকৃত সুখ। দূর গাঁয়ে ফেলে আসা মায়ের মুখ, মায়ের স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠা, মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকার বেদনা কিংবা সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে দূর অজানায় পাড়ি জমানোর পর মায়ের স্মৃতিÑ এসবই আমাদের প্রতিনিয়ত পোড়ায়। হু হু করে ওঠে বুকের ভেতরটা। আর যখনই মায়ের কথা মনে পড়ে, মনের অজান্তেই চোখ ভিজে যায়। ইচ্ছা করে ছুটে যাই মায়ের কাছে। একচিলতে আদর আর শাড়ির আঁচলে মুখটা বেঁধে ডুব দিই ভালোবাসার সাগরে। জন্মের সূচনাপর্ব থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মায়ের অবদান অতুলনীয়। কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায়Ñ কিছু সন্তান যেমন তার মাকে সবসময় যথেষ্ট সম্মান দেয় না, ঠিক তেমনি মা-ও তার মাতৃত্বের অকৃত্রিম ভালোবাসা ভুলে নিজের মতো করে অবিবেচনাপ্রসূত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
যে মা আমাকে গর্ভে ধারণ করে পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখিয়েছেন, আজ সেই মাকে আমরা কখনও কখনও অবহিলিত অবস্থায় দেখতে পাই। কথায় বলেÑ ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না’। মা ঠিক তেমনই এক ব্যক্তি, যাকে একবার হারালে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। অন্য সবকিছু হারালে তা পাওয়া যায় বা পাওয়া সম্ভব’ কিন্তু মা হারালে, মা পাওয়া গেলেও আপন মায়ের মতো আর পাওয়া যাবে না। প্রত্যেক মা-ই তার নিজের অজান্তেই চান, তিনি যেমন তার সন্তানকে অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে বেঁধে রাখেন। তার সন্তানও তেমনি তার প্রতি ভালোবাসার ডানা প্রসারিত করুক। মুখের নয়, প্রত্যেক মায়ের মনের এই আশা পূরণের জন্য আমরা সবাই সচেষ্ট হই। মা দিবসে প্রতিটি মায়ের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা ও নিরন্তর ভালোবাসা। শুধু দিবসেই নয়, মাকে সবসময় মনের মণিকোঠায় রেখে মায়ের সম্মান দিয়ে আগলে রাখবÑ এটাই প্রত্যাশা সবার প্রতি। 
শফিকুল ইসলাম খোকন সাংবাদিক ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নদী মরলে দেশও মরবে

: শফিকুল ইসলাম খোকন : নদীমাতৃক দেশে নদীই আমাদের ভরসা। নদী আমাদের হৃৎপিণ্ড, নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না, প্রকৃতি বাঁচবে না, পরিবেশের সুরক্ষা ...