::শফিকুল ইসলাম খোকন::
উলেস্নখ্য যে, নতুন আইনের ১৭ থেকে ৩৮ ধারায় বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্ত্মির বিষয় উলেস্নখ রয়েছে। আর আইনটি পাস হলে ১১ সদস্যের একটি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল’ গঠন করা হবে, যার প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী। আইনটির ৩২ ধারা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বলেই প্রকাশিত খবরে জানা যায়। এ ধারায় ডিজিটাল অপরাধের বদলে গুপ্তচরবৃত্তির সাজার বিধান রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ঢুকে কেউ কোনো কিছু রেকর্ড করলে, তা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে। প্রথম দফা এ অপরাধ করলে ১৪ বছরের কারাদ- বা ২৫ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- প্রয়োগ করা যাবে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে যাবজ্জীবন কারাদ- বা এক কোটি টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- দেওয়া যাবে। নতুন আইন অনুযায়ী ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকা-, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করলে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা বস্নক বা অপসারণের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, নতুন আইনের আওতায় কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো ধরনের প্রপাগান্ডা চালায় তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করে, তাহলে ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে।
আমরা উলেস্নখ করতে চাই, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল হলেও নতুন আইনে আগের মতো হয়রানির আশঙ্কা থাকবে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে যখন আইনমন্ত্রী বলেছেন, অযথা হয়রানি যাতে না হয়, সে জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপপ্রয়োগের সুযোগ ৯৭ ভাগ বন্ধ হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। ফলে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, আইনের অপ্রয়োগ হলে তা অত্যন্ত্ম আশঙ্কাজনক বাস্ত্মবতাকেই নির্দেশ করে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও ৫৭ ধারার আদলে কিছু বিধান রাখা হয়েছে, যা মত প্রকাশের এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় বাধা হতে পারে’- যখন এমন আশঙ্কার বিষয়টিও প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে- তখন সামগ্রিকভাবেই এই বিষয়গুলোকেও সংশিস্নষ্টদের আমলে নিতে হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না ৫৭ ধারা নিয়ে দুশ্চিন্ত্মার প্রধান কারণ ছিল এর অপপ্রয়োগ। ফলে ধারাটি বিলুপ্ত হলেও যেহেতু বর্ণিত বিষয়গুলো বিভিন্ন ধারার মধ্যে বিন্যাস করা হয়েছে, ফলে আইনের অপপ্রয়োগ রোধ করার বিষয়টি গুরম্নত্বপূর্ণ। মনে রাখা দরকার, অপপ্রয়োগ রোধ না হলে মানুষ হয়রানির শিকার হয়, যা সার্বিকভাবেই নেতিবাচক বাস্ত্মবতাকেই স্পষ্ট করে। সর্বোপরি বলতে চাই, কোনোভাবেই যেন আইনের অপপ্রয়োগ না হয় সেটি নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।
লেখকঃ সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক
msi.khokonp@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন