শফিকুল ইসলাম খোকন
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জীবনের এমন এক অধ্যায়- যাকে কোনো কিছু থেকেই বিচ্ছিন্ন করা যায় না। না যাপিত জীবনে, না মননের েেত্র। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের প্রেরণা। দীর্ঘদিন পরাজিত, দমিত, দলিত জনগোষ্ঠীর আত্ম-আবিষ্কারের নাম মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মূলে রয়েছে তরুণ সমাজের সংগ্রাম ও স্বপ্ন। এ বিজয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালিত্বের চেতনা, ধর্মনিরপেতা, সমাজতন্ত্রের চেতনা, গণতন্ত্রের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ এলে এসব চেতনার কথাই আমাদের মনে জাগে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর যত শাসক এসেছে তারা সুকৌশলে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার করতে চেয়েছে এবং অসম্মান ও মযর্দাহীন করেছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ায় ইতিহাসও কিছুটা বিকৃত হয়েছে এটি অস¦ীকার করার কোন সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা এর সঠিক ইতিহাস বিরাজমান রাখতে বয়স্কদের যেমন বিশেষ দায় আছে তেমনি নতুন প্রজন্মের দায়িত্বের পাশাপাশি দায়বদ্ধতাও রয়েছে।
৫০ বছর পেরিয়ে গেল স্বাধীন বাংলাদেশ, এখনো আমাদের নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করার দায়িত্ববোধ হয়নি এমনকি যারা এর ধারক বাহক তাদেরও জানানোর দায়িত্ব সেটিও বেমালুম ভুলে গেছে। যদিও আওয়ামীলীগ সরকার এসে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক েেত্র সম্মান দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করেছেন, মুিক্তযোদ্ধা সন্তানদের অধ্যয়নরত প্রত্যেককে ১ হাজার ৫০০ হারে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। সবশেষ ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না’ সরকারের এমন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর নিবাস’র ১৪ হাজার থেকে ৩০ হাজার করা হয়েছে। এ দিয়ে শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিকভাবে স¦াবল¤ি¦ করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন, মুক্তিযুদ্ধের স¥ৃতি ধরে রাখতে নতুন প্রজন্মের জন্য কি করা হয়েছে? এ জন্য সংশ্লিষ্টদের এখন নতুন করে ভাবতে হবে, স¦াধীনতার ৫০ বছরে এসে দেড়ি হলেও ভাবার এখনই সুযোগ। শুধু বিজয়ের বা স¦াধীনতার মাস কেন সব সময়ই নবীনদের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে হবে এবং জানতেও হবে। এ জন্য ২০১৪ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধকে জানি’ দেশের একবারে দনিাঞ্চলে নতুনদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য কাজ করছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ স্বাধীনতার েেত্র যে অবদান রয়েছে এ বিষয় আমি পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। তাদের ত্যাগ, অবদান মূল্যায়ন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান, শ্রদ্ধা করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে-প্রাণে লালন করা বীরদের সম্মানের েেত্র যে শুধু ভাতা দেওয়া, আবাসন দেওয়া এমনটা নয়, এমনকি এটি শুধু যে সরকারের কাজ এমনটাও নয়। আমাদের জনগণের প্রত্যেকের নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব এবং কর্তব্য মনে করে কাজ করতে হবে। তা নাহলে একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে দাবি করা বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে; মুক্তিযোদ্ধাদের মনে-প্রাণে ভালোবাসা, সম্মান ও মূল্যায়ন করাই হলো আমাদের কাজ।
মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যুগযুগ ধরে স্মরণীয় রাখতে এমন প্রস্তাব হতে পারে যেমনÑস¦াধীনতার পর থেকে স¦াধীনতা দিবস, বিজয় দিবস পালন হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে আজ পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স¥রণে আলাদাভাবে কোন দিবস পালন হয়নি এ জন্য ১ ডিসে¤¦র ‘মুক্তিযুদ্ধ দিবস’ পালন, প্রতিটি উপজেলায় স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সে ‘মুক্তিযুদ্ধের যাদুঘর’ তৈরি, প্রতিটি শিাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরণ ও মুক্তিযুদ্ধের কর্নার করা, যদিও বঙ্গবন্ধুর কর্নার রয়েছে, উপজেলাভিত্তিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় শিার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘গল্পে গল্পে মুক্তিযুদ্ধ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সচেতন করা, প্রতিটি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির সামনে রাস্তার নামকরণ, বধ্যভূমিগুলো আধুনিকায়ন করে প্রকৃত ইতিহাস স¤¦লিত স্তম্ভ তৈরি করা, প্রতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ প্রকাশনা প্রকাশ করা। অবদান স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে ইতিহাস এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের বিষয় জানাতে এর বিকল্প নেই। এ কাজের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা থাকবেন। একদিন মুক্তিযোদ্ধা থাকবে না, থাকবে শুধু স্মৃতি।
পরিশেষে বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে সে বিষয়টি নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনুধাবন করতে হবে। এখন সময় এসেছে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতার প-বিপ চিহ্নিত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত একটি তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। নতুন প্রজন্ম সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। এর মাধ্যমে একটি গতিশীল জাতি গঠিত হবে এবং এগিয়ে যাবে নতুন প্রত্যাশায়। নতুন প্রজন্ম হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি আধুনিক প্রজন্ম, যারা বাস্তবায়ন করবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন